মেন্টাল মডেল: পার্ট ৬
ডিভোর্স পেপারটি সাইন করে জলিল সাহেব মাত্র বের হলেন
বুকের বা-পাশ টা কেমন যেন চিনচিন করে ব্যথা করছে
আনমনা ভাবেই গাড়িতে চড়লেন
ড্রাইভ করছেন আর বেকগ্রাউন্ডে মেন্টাল চেটার শুনছেন:
“১২ বছরের সুন্দর সম্পর্কটি এভাবেই শেষ হয়ে গেলো?”
“৫ বছরের ফুটফুটে ছেলেটি আমার”
“মা বাবাকে আর একসাথে দেখতে পাবে না”
“কি করে একা একা বড় হবে লক্ষিটি?”
“ভারী অন্যায় হয়ে গেলো ওর প্রতি”
“কি করে ছেলেটিকে এই খবরটি দিবো ?”
দারোয়ান গেট খুলতেই হটাৎ খেয়াল হলো, কখন যেন তিনি বাসায় ফিরে এসেছেন?
ইদানিং এটা প্রাই হচ্ছে,
পছন্দের একটা গান শুনছেন, অথচ খেয়ালি করেননি কখন গানটা শেষ হয়ে গেলো
ড্রাইভ করছেন, কিন্তু খেয়ালি করেননি কোনসময় টার্ন নেয়ার গলিটা পিছনে ফেলে এসেছেন
কারো সাথে পরিচয়ের বাদেই, কিছুতেই লোকটির নাম মনে করতে পারেন না
নিজেকে প্রশ্ন করলেন…কেন হচ্ছে এমন?
অনেক ভেবে চিন্তে ছেলের কাছে গিয়ে বসলেন
বললেন
“বাবা, আজ থেকে মা কিন্তু আরেকটা বাসায় থাকবেন”
“কেন?”
“মার কাজ আছে তো তাই”
অভিমানী সুরে ছেলের উত্তর
“ও আচ্ছা”
মুড্ চেঞ্জ করতে, জলিল সাহেব বললেন
“আচ্ছা বাবা বলতো বিষয়টিকে আমরা কি করে আরো পসিটিভলি দেখতে পারি?”
ছেলেটি খানিক চিন্তা করে চোখ মুখ উজ্জ্বল করে বললো
“আমমম.. আমার এখন দু-দুটো বাসা হয়ে গেলো বাবা!”
“দু বাসাতেই ডাবল ডাবল খেলনা হবে”
“ডাবল ডাবল ফ্রেন্ডস হবে”
“তাই না?”
“তাই তো?”
“আর আমি তোমার সাথে এখন আরো ঘন ঘন ট্রাভেল করতে পারবো”
অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকিয়ে জলিল সাহেব বললেন
“এবার বোলো তো, তোমাকে হ্যাপি করার জন্য বাবা আর কি কি করতে পারে?”
ছেলেটি এবার উত্তর দিলো:
“এটা একটু বেশি বেশি করবে”
বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন
“কোনটা?”
“এই যে, আজ যেটা করলে”,
“আমার সাথে এসে চোখে চোখ রেখে কথা বললে, এইটা”
জলিল সাহেব চমকে গিয়ে রিয়েলাইস করলেন
আরে, তাইতো!,
“আমি তো যেন থেকেও নেই!”
“কোথায় সব সময় এমন হারিয়ে থাকি?”!!!
.
.
.
একটু ভেবে দেখুন তো, জলিল সাহেবের মতো আমরাও কি এমন আনমনে একটা জীবন পার করে দিচ্ছি না?
আপনি যখন আপনার ওয়াইফ অথবা কলিগ বা ফ্রেন্ডদের সাথে আছেন,
“আপনি কি আসলেই আছেন? নাকি মেন্টাল চেটারে ডুবে আছেন?”
আপনার এই মেন্টাল চেটারটি কিন্তু বেশ নাছোড় বান্দা
এই মেন্টাল চেটারটি হচ্ছে আপনার জীবনের বিরামহীন মনোলোগ যা সারাক্ষন সাব টাইটেল মেরেই যাচ্ছে।
ওকে না পারবেন চুপ করাতে আর না পারবেন শেষ করতে…
তবে তাকে বশ করা জন্য একটা টুল ব্যবহার করতে পারেন
আর তা হলো
“আওয়ার্নেস” বা “মাইন্ডফুলনেস”
আপনি যখন সচেতন হয়ে এই মেন্টাল চ্যাটার কে অব্জার্ভ করবেন, দেখবেন,
এটা একটা ধুয়ার মতো গায়েব হয়ে যাবে
মাইন্ডফুলনেস হচ্ছে একটা স্কিল, এমন একটা স্কিল যা প্রতিদিনের প্র্যাক্টিসের মাধ্যমে ইম্প্রোভ করা যায়
মাইন্ডফুলনেস ইম্প্রোভ করার জন্য “মেন্টাল মডেল পর্ব ৪ এ”, আমরা দুটো এক্সারসাইজ দেখিছিলাম,
আজ আরেকটি দিলাম
আজকের এক্সারসাইজ: (মাইন্ডফুল ইটিং)
“প্রতি দিন একটি অন্তত মিল মাইন্ডফুলি খান”
খাবার সময়, নো মাল্টিটাস্কিং, নো স্মার্টফোনে, নো ব্রাউসিং, নো ইমেইল চেকিং
জাস্ট খাওয়ায় ফোকাসড হন
ক্ষুদার্ত নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে না পরে, খাওয়াটি আস্তে আস্তে গ্রহণ করুন
প্রতি লোকমা অন্তত ১০ বার করে চাবান
লক্ষ করুন খাবারের স্বাদটা কেমন
বিশ্বাস করুন, একটা ধাক্কার মতো লাগবে
একটা খাবারের যে এতো গুলো স্বাদ থাকতে পারে, তা হয়তো আপনার কল্পনারও বাইরে ছিল
খেতে খেতে অনুধাবন করুন,
যে খাওয়া আপনি খাচ্ছেন, তা কি ভাবে এনারজিতে কনভার্ট হচ্ছে?
কে দিচ্ছে এই খাবার, কিভাবে হচ্ছে এই মিরাকেল?
অনুভতি হবে যে,
“আরে! এই খাওয়াটাই তো একটা ইবাদত”
এই মাইনফুল ইটিং এ আপনার বেশ কিছু সাইড এফেক্টও আছে
যেমন
আপনার ফুড ইনটাকে সারপ্রাইসিং লেভেলে কমে যাবে
পেটে হাল্কা খিদে রেখে উঠে যেতে পারবেন
শরীর আরো হালকা ও হেলদি লাগবে
জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ বেড়ে যাবে
তার থেকেও বড় কথা, রাসূলের একটা সুন্নত শুরু করার সওয়াব পেয়ে যেতে পারেন…
বি দ্রঃ
সুন্নতের কথা শুনে যদি আপনার সেক্যুলার সত্তা বিদ্রোহ করে উঠে, তাহলে না হয় ডায়েট এডভাইস হিসেবে “মাইন্ডফুল ইটিং” স্টার্ট করুন
Reference:
[1] তিনি তোমাদের জন্যে উৎপাদন করেন ফসল, যয়তুন, খেজুর, আঙ্গুর ও সর্বপ্রকার ফল। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীলদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। [কোরান ১৬:১১]
[2] মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক, কি করে আমি পানি বর্ষণ করেছি, এরপর ভূমিকে বিদীর্ণ করেছি, এরপর তাতে উৎপন্ন করেছি যা তোমাদের ও তোমাদের পশুদের জন্য শস্য শাক-সব্জি,আঙ্গুর, যয়তুন, খর্জূর, ফল ঘন উদ্যান এবং ঘাস । [কুরআন ৮০:২৪]