Mental Model Part 2

Part 1 Part 2 Part 3 Part 4

নামাজ পড়ছি আর বিভিন্ন চিন্তায় হারিয়ে যাচ্ছি , ভুলে যাচ্ছি প্রথম রাকাতে যেন কোন সূরাটা পড়েছিলাম

ভাবছি, আশ্চর্য! শয়তানকে না আটকিয়ে রেখেছে ? তাহলে তারপরেও কেন এখনো এতো ডিস্টার্বেন্সে?

আসলে ব্যাপারটা হলো….শয়তান ছাড়াও আমাদের জীবনে আরেকটা সাথী আছে আর এই সাথীটি মোটামোটি সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত অনর্গল ভাবে বকবক করেই যাচ্ছে, এ এক unavoidable যন্ত্রনা

সাথীটি হলো আমাদের মেন্টাল চ্যাটার

এই মেন্টাল চ্যাটার শুধু নামাজেই নয় জীবনের সব কোটা ক্ষেত্রেই আমাদেরকে বশ করে রেখেছে

এই ধরুন,

পছন্দের একটা গান শুনছেন, অথচ খেয়ালি করেন নি কখন গানটা শেষ হয়ে গেলো

অথবা ড্রাইভ করছেন কিন্তু খেয়ালি করেন নি কোনসময় টার্ন নেয়ার গলিটা পিছনে ফেলে এসেছেন,

আবার ধরুন, বাসার অতীব জরুরি জিনিষটা হাজার মনে করে দেয়া সত্ত্বেও কি করে জানি আপনি বেমালুম ভুলে গিয়েছেন

এ যদি আপনার জীবনের গল্প হয়ে থাকে, তাহলে বলতে হবে আপনার মেন্টাল চ্যাটার বেশ ভালো ভাবেই কনসিউম করে রেখেছে এবং আপনার খবরই নাই
.
আপনাকে যদি সকালের প্রথম ৫ মিনিটের মেন্টাল চ্যাটার এর বকবকানির একটা উদ্যারণ দেই তাহলেই বিষয়টি ক্লিয়ার হয়ে যাবে

অ্যালার্ম বাজলো!!

উফফ কেন আর ১৫ মিনিট ঘুমাতে পারিনা…. কত দিন ধরে ঠিক মতো ঘুমাই না….. ধুর আজ আর অফিস যাবো না….. অফিস, ওহ না অফিস তো আজ একটা মিটিং আছে….. তারপর স্যারকে একটা রিপোর্ট পাঠাতে হবে, কি আর করার, বাইক স্টার্ট দিলেই হয়তো আলসেমি দূর হয়ে যাবে… বাইক? অনেক দিন তো হলো, এখন একটা নতুন বাইক নেয়া দরকার, একটা সাইটে জোস্ একটা বাইক দেখেছিলাম।..আচ্ছা আমার নিজের একটা সাইট দরকার, ঠিক আছে, আজ গিয়েই একটা ওয়েবসাইট বানিয়ে ফেলবো, আচ্ছা এই সপ্তাহে আর কি নিয়ে লিখা যায়? …….

এ যেন এক বিরামহীন বাঁদরের গাছ বাওয়ার গল্প. অবিরাম ভাবে এক গাছ থেকে আরেক গাছে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে

অথবা মেন্টাল চ্যাটারটি যেন কোনো উষ্কানীমূলক সাইটের বিরক্তিকর পপআপ, একটা অ্যাড ভুল ক্রমে ক্লিক করলেন তো বাস, পঙ্গপালের মতো বিরামহীন এটাক শুরু

এতো গেলো কেবল প্রথম ৫ মিনিটের বকবকানি, চিন্তা করুন সারাদিন কি পরিমান বকবকানি আপনাকে সহ্য করতে হয়, নো ওয়ান্ডার আপনি কেন সারাদিন এতোটা stressed থাকেন

আপনার এই মেন্টাল চ্যাটার এর মুড বোঝাও বড় দায়

কখনো সে আপনাকে ফুলিয়ে আকাশে উঠাচ্ছে

“ওহ আজ তো তোমায় জোস্স্ দেখাচ্ছে,” অথবা “আরে, তুমি ছাড়া এই কাজ আর কে করতে পারবে, বলো?”

অথবা কখনো পটাশ করে বেলন ফুটিয়ে আছড়ে ফেলছে

“তুই একটা আস্ত রাম ছাগল তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না”

কখনো কখনো অন্যকে দেখিয়ে বলছে

“দেখনা নেকাটা কেমনে মাথা দুলাইয়ে বসের সস্তা জোকে হেসে যাচ্ছে, শালা বাটপার, সব সময় খালি তেলবাজি”

আবার কখনো কখনো

“দেখেছিস! বেটা কি স্মুথলি কথা বলে যাচ্ছে, তুই জীবনেও এমন হতে পারবি না, ওর প্রমোশন হবে না কি তোর হবে? ”

অথবা

“তোর বিশাল To Do List তা চেক করেছিস? এতো কাজ কবে শেষ করবি, কি দরকার এতো কাজের? দুই দিনের জিনদেগি, যা একটা মুভি দেখে শুয়ে পর ”

আপনার মেন্টাল চ্যাটার এর এই ছোট ছোট সাজেশনস গুলো অনেকটা ছোট ছোট কোরাল পলিপের মতো, ইন্ডিভিডুয়ালি তারা হয়তো কিছুই না, কিন্তু একসাথে তারা শক্তিশালী কোরাল রিফ গড়ে তুলে, যা কিনা যেকোনো জাহাজের পাটাতন চিরে ফেলার জন্য যথেষ্ট

আপনার এই মেন্টাল চ্যাটারও তেমনি এই কোরাল পলিপের মতো আস্তে আস্তে আপনার জীবনের গ্রেট বেরিয়ার রীফ তৈরী করে যাচ্ছে, আর সেটা হচ্ছে আপনার জীবনের রিয়ালিটি

এক নম্বর পর্বে আমরা দেখেছি কিভাবে আমাদের মেন্টাল মডেল আমাদের রিয়ালিটিকে শেপ দিচ্ছে, বস্তুত তা সে করছে এই কনস্ট্যান্ট মেন্টাল চেটার এর মাধ্যমেই

এই মেন্টাল চেটারটি হচ্ছে অনেকটা ইন্টারনাল মনোলোগের মতো যা অবিরাম ভাবে সাব টাইটেল মেরেই যাচ্ছে। ওকে না পারবেন চুপ করাতে আর না পারবেন শেষ করতে…

তবে আমাদের এই মেন্টাল চ্যাটারকে বশ করা জন্য আমরা একটা টুল ব্যবহার করতে পারি

টুলটি হলো “আওয়ার্নেস” বা “মাইন্ডফুলনেস”

আপনি যখন “কনসিয়াসলি আওয়ার” থেকে এই মেন্টাল চ্যাটার কে অব্জার্ভ করেন দেখবেন, এটা একটা ধুয়ার মতো গায়েব হয়ে যাচ্ছে

অলমোস্ট ম্যাজিকালি

সো কিভাবে এই টুলটি প্রয়োগ করবেন?

ধরুন আপনি নামাজে আছেন আর অটো পাইলট মুডে ফুল স্পীড সূরা ফাতিহা পড়ে যাচ্ছেন, তখন একটু ব্র্যাক চাপেন, কনসিয়াসলি নিজেকে প্রশ্ন করুন, আচ্ছা এই মুহূর্তে আমি কার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, লক্ষ করুন মেন্টাল চ্যাটার গায়েব হয়ে যাচ্ছে

রুকুতে গিয়ে এক নিঃশ্বাসে সুবহানা রাব্বি আল আজিম পড়ে যাচ্ছেন, একটু থেমে প্রশ্ন করুন, আচ্ছা আমি কার সামনে মাথা ঝুকিয়ে রেখেছি, তিনি কি আমার কথা শুনছেন, লক্ষ করুন মেন্টাল চ্যাটার আস্তে আস্তে গায়েব হয়ে যাচ্ছে

সেজদাতে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পড়ে যাচ্ছেন, এরই মাঝে pause দিয়ে প্রশ্ন করুন আচ্ছা এই মুহূর্তে আমি কাকে সেজদা দিয়ে আছি, তিনি কি আমাকে দেখছেন, আবারো লক্ষ করুন মেন্টাল চ্যাটার আস্তে আস্তে গায়েব হয়ে যাচ্ছে

কয়েকদিন এই এওয়ারনেস টি প্র্যাক্টিস করুন, মনে রাখবেন আপনি হচ্ছেন একজন অবজার্ভার, যেই চিন্তায় আসুক না কেন তাকে জাজ করবেন না বা গালি দিবেন সিম্পলি অব্জার্ভে করবেন

প্রতিটি চ্যাটে আপনার ভিতরের ফিলিংস গুলোও অব্জার্ভে করুন, আপনি কি রেগে যাচ্ছেন না চিন্তিত হচ্ছেন না ভয়ে মুর্শে যাচ্ছেন?

পারলে একটা জায়গায় লগ মেইনটেইন করুন

কিছু দিনের মদ্ধেই টের পাবেন আপনার জীবনে এক আশ্চর্য রকমের change চলে এসেছে

আপনি আর এখন কোনো চিন্তা বা দুশ্চিন্তায ডুবে নেই, আপনি কনস্টেন্টলি মাইন্ডফুল আছেন কারেন্ট মোমেন্টে….

এটা একটা অ্যামেজিং এক্সপেরিয়েন্স

আমাদের এই কনস্ট্যান্ট এওয়ারনেস থাকাটাকেই কিন্তু আরবিতে তাকওয়া বলে, এবং যারাই কনস্ট্যান্টলি এই তাকওয়া স্টেট এ থাকেন তাদেরকেই মুত্তাকী বলে….

 

Part 1 Part 2 Part 3 Part 4

 

Leave a comment